October 13, 2025

Bookish Life

Home of Readers

মরুর বুকে ভালোবাসার নাম – বুলেট কিংবা ভালোবাসায়

বুলেট কিংবা ভালবাসায় - bookish life review - western thriller bangla

মানুষের জীবনের বৈচিত্র এবং জীবনের চলার ধরন এক নয়। যুগের সাথে এগিয়ে চলা হচ্ছে জীবনের নীতি। তবে এই নীতিতে কিছু কিছু সময় পরিবর্তন আনতে হয়। পরিবর্তন হয়। পরিবেশ সমাজ মানুষের জীবন ধারণের অবস্থান সব কিছুতেই পরিবর্তন আসে। আনা জরুরী। তবে সেটা যেন মানুষ এবং সমাজের জন্য কল্যান বয়ে আনে, অন্ধকার নয়। যখনই অন্ধকার ছেয়ে আসে, তখনই কেউ না কেউ সামনে এসে দাঁড়ায়। হাতে নিয়ে আলোকবর্তিকা। যেন তার অপেক্ষায় ছিল সময়। এভাবেই যুগ আর সময় এগিয়ে চলে।

বুলেট কিংবা ভালোবাসায় - ফাহাদ আল আবদুল্লাহ

রুক্ষ মরুর বুকে ভালবাসার ফুল ফোটানো অনেক কষ্টসাধ্য। তবুও কিছু মানুষ আকড়ে ধরে থাকে। জীবনের শুষ্ক দিন শেষ হয়ে সুন্দরতম দিনের অপেক্ষায়। মরুর বুকে এক ফোটা বৃষ্টি যেন আশীর্বাদ হয়ে ধরা দেয়, ঠিক তেমন কেউ কেউ আছে যার ছায়াতলে মানুষ তার শেষ আশ্রয় খুজে চলে। যুদ্ধ, প্রেম, মায়া, বিবেক, রাজনীতি, সততা এবং ন্যায় ও অন্যায়ের লড়াই। আলো এবং অন্ধকারের খেলা। শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে।

এরিজোনার একটি ছোট শহর রোডস। গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর এখানে কিছু মানুষ তার আশার আলো খুজে পায়। শহরটাকে নিজেদের মত করে সাজিয়ে নেয়। যুদ্ধ শেষ হলেও তার রেশ ঠিক রয়ে যায়। কেউ কেউ যুদ্ধের ধারা নিজের ভেতরে ধরে রাখে। খন্ড খন্ড বিরোধের আর গন্ডোগোল এর খবর পাওয়া যায়। কেউ কেউ বাচার আশায় ছুটে চলে অজানায়। শহর থেকে শহরে ছুটে বেড়ায়, একটু জীবনের খোজে। সবার আগে বাচতে হবে। এটাই যেন মুলমন্ত্র। সবাই শুধু ছুটে চলেছে, যেন জীবন এখানে থেমে নেই। একটু আশ্রয় আর বাচার তাগিদে সবাই একটা শীতল ছায়া খুজে চলেছে। আর সেই ছায়া তল হচ্ছে কর্নেল এবারডিন ফিনিগান।

কর্নেল, তার শার্প শ্যুটার শিষ্য ডয়েল ব্রাদার্স, নাভোহা যোদ্ধা সোল-লেকস, পিতা হারা স্যাম ডেভিস সহ তারা ছোট রোডস শহর কে আগলে রেখেছেন। কর্নেল এই শহরের ল্যান্ড এবং ক্যাটল ওভারশিয়ার। তার কাছেই সরকারি ভাবে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ রয়েছেন। প্রচন্ড নীতিবান একজন মানুষ। যার কাছে শত্রুও সম্মান পায়। যেখানে তিনি ন্যায় এবং অন্যায়কে সমান ভাবে পরিমাপ করেন। ন্যায়ের জায়গা থেকে তাকে কেউ একচুল নড়াতে পারে না। কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা কিন্তু থেকে যায়। হয়ত এটাই জীবন। 

রাজনীতি, যুদ্ধ, ধোকা, প্রেম, মায়া, আর ভালবাসার অপূর্ব সব সংমিশ্রণ। সব কিছু ছাপিয়ে শত্রুর কূটচালকে ভেস্তে দিয়েছে দৃঢ়তার সাথে। আপনজনের ধোকা, অপমান এবং অসম্মানকে ন্যায় ও নীতির বিচারে নিয়ে এসেছেন। সেখানেও তিনি দেখিয়েছেন সম্মান। তার কাছ থেকে শেখা সব কিছু তার শিষ্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধের দামাম আবার অভিজ্ঞতার ক্ষুরধার বাক্যবান সব কিছু সামলিয়েছেন শক্ত হাতে। শত্রুর ছুড়ে দেয়া এক একটা কূটচাল ভেস্তে দিয়েছেন কঠোরভাবে। ক্ষমতালোভী, কূটনীতি, আর ধোকার জবাবটাও কর্নেল দিয়েছেন তার নীতি থেকে।

এই কঠোরতার মাঝেও ভালবাসার পরশ, এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নেমে এসেছে। হারিয়ে যাওয়া ভালবাসাকে খুজে পাওয়া। কখনও বা নতুন করে কারো বাচার স্বপ্ন হয়ে ওঠা। বহুদিনের চেনা মানুষের কাছে নতুন ভাবে প্রেম এবং ভালবাসা সংজ্ঞাকে নতুন ভাবে চেনা। এত কিছু, দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মাঝেও ভালবাসা ঠিকই খুজে নিয়েছে। মরুর বুকে যেন ফুটে কোন অজানা ফুল।

বন্দুক, পিস্তল, স্পার বুট, কাউবয় হ্যাট আর ঘোড়ার অবস্মরনীয় কৃতি সবকিছুই জীবন্ত। র‍্যাঞ্চ, ট্রেন-ধাওয়া, বার-ফাইট, ডুয়েল, ক্যাম্পিং, শিকার এবং স্ট্যাম্পিড সহ সব কিছুই উঠে এসেছে। যেন চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোন ওয়েস্টার্ন সময়।

“বুলেট কিংবা ভালোবাসায়” মৌলিক ওয়েস্টার্নটি ফাহাদ আল আবদুল্লাহ এর লেখা একটা বিশাল ওয়েস্টার্ন এডভেঞ্চার থ্রিলার। মুলত একটি ছোট্ট শহর কে ঘিরে উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে। যেখানে ন্যায় নীতি সততা রয়েছে, রয়েছে ভালোবাসা আর প্রেম। সেই সাথে রয়েছে ধোকা এবং ক্ষমতার লিপ্সা।

লেখক খুব সুন্দর ভাবে প্রতি চরিত্র, প্রতিটি ঘটনা সুন্দর ভাবে লেখনিতে তুলে ধরেছেন। বিশাল কলবরে লেখা হলেও প্রতিটি ঘটনার সুবিস্তার গল্পটিকে আরও চকমপ্রদ করে তুলেছে। এর সাথে সাথে ওয়েস্টার্ন ইতিহাস থেকে শুরু করে গৃহযুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তি পরিস্থিতকে লেখক দারূণ ভাবে বর্ণনা করেছেন। সুক্ষ্মভাবে তুলে এনেছেন সাদা কালোর পার্থক্য। কালোদের নির্যাতন এবং কষ্টের কথা। প্রতিটি ঘটনা, সংলাপ, থেকে শুরু করে সব কিছু সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন।

এখানে কথা হচ্ছে যারা ওয়েস্টার্ন পরে অভ্যস্ত নয় বইটি আসলে তাদের জন্য নয়। কারণ বইটি শুরুর দিকে কিছুটা ধীর গতির। ওয়েস্টার্নের মুলত বৈশিষ্ট্য এমন ই। কাহিনীর শুরুটা খুব ধীর গতিতেই হয়। গল্পের কাহিনীর জন্য ঘটনা ও বর্ণনা কিছুটা বিস্তারিত হয়ে থাকে। এটা সবার পছন্দ নাও হতে পারে। তাই বইটি পড়ার জন্য কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। একবার কাহিনীর সাথে জড়িয়ে গেলে তখন বইটি আর না শেষ করে ওঠা যায় না।

পরিশেষে বলা যায় মৌলিক ওয়েস্টার্ন হিসেবে লেখক ফাহাদ আল আবদুল্লাহ দারূণ করেছে। তবে বইটির কিছু কিছু জায়গাতে কাহিনী একটু মন্থর হয়ে গিয়েছিল, এছাড়া প্রুফ রিডিং করা দরকার ছিল বানানের ভুল গুলো একটু চোখে পরেছে।

বইটির শেষ বা শুরু পুরোটাই একটা দারূণ আবহ তৈরি করে। যারা ওয়েস্টার্ন প্রেমী তাদের কাছে আশা করি বইটি ভাল লাগবে।

“হোয়েন জনি কামস মার্চিং হোম এগেইন, হুরাহ, হুরাহ…”

 

 

রিভিউ – আরিফ রায়হান অপু