যে সব দৃশ আমরা খুব মন লাগিয়ে দেখতে চাই সে সব দৃশ্য কখনো ভালভাবে দেখতে পারি না সেই সব দৃশ্য অতি দ্রুত চোখের সামনে দিয়ে চলে যায়
জীবনের প্রয়োজনে জীবন নাকি জীবনের জন্য বেচে থাকার লড়াই। সত্য এবং মিথ্যা দুটো মাঝে মিল কোথায়। আবার সত্য কি সব সময় সত্য নাকি মিথ্যাও কখনও সত্য হয়ে দাঁড়ায়। কে বলতে পারে জীবনের মানে কি, অথবা জীবন কার কাছে কেমন। সে হতে পারে কঠিন আবার কারো কাছে সহজ। কে বলতে পারে কে কোথায় থেমে যাবে, আবার কারো শুরু হয়ত সেখান থেকেই হবে।
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার জীবন কে নিজের মত করে দেখেছে। অবস্থান আর পরিবেশ বিবেচনা করে মানুষের কথা, স্বভাব ও আচরনের পরিবর্তন এসেছে। শুধু তাই নয় পরিবর্তন এসেছে মানুষের মনের। সব সময় নিজের প্রতি মানুষের অপরিসীম ভালবাসাও এর অন্যতম একটি কারণ।
গল্পের জীবন, নাকি জীবনের গল্প। দুটোই ঠিক অথবা দুটোই ভুল। আবার কোনটিই ঠিক নয়। মানুষ মুলত বেচে থাকে জীবনের গল্পে। কারণ জীবন থেকেই গল্পের শুরু। শেষটাও সেই গল্পের মাধ্যমেই। মাঝে শুধু কিছু দৃশ্যপটে আটকে থাকা কিছু স্মৃতি।
রাসোমন – জীবনের গল্প
কালের আবর্তে অনেক গল্প, সাহিত্য হারিয়ে যায়, আবার কিছু কিছু গল্প থেকে যা মানুষের মাঝে চির সবুজ হয়ে। জাপানের রিয়ুনোসুলে আকুতাগাওয়া এমন একজন সাহিত্যিক যাকে জাপানের ছোট গল্পের পথিকৃৎ ধরা হয়ে থাকে। রাসোমনে উঠে এসেছে জাপানের ইতিহাস এবং সেই সময়ের ঘটনা প্রবাহ। সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে মানুষের জীবন ধারা।
তার লেখা শুরু থেকেই মানুষের মনে এবং সাহিত্যে জায়গা করে নিয়েছে। তা লেখা গল্প গুলোকে জাপানের ছোট গল্পের অন্যতম ধারকও বলা যায়। তার শুরুর দিকে লেখা “রাসোমন” সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি। এই সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি অমর হয়ে গিয়েছেন বিশ্ব-সাহিত্যে।
বিখ্যাত চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া তার গল্পে এতটাই অনুপ্রানিত হয়েছেন যে, তিনি এরপর তৈরি করেছেন বিখ্যাত সিনেমা “রাসোমন”। আকুতাগাওয়ার লেখা এবং গল্প বলার ধরন পুরোটাই ভিন্ন। তিনি গল্প বলার ধরনে দিয়েছেন আধুনিকতা। গল্প বলার ধরন এতটা আলাদা যে আপনার ভাবনা ও চিন্তাকে ভাবতে বাধ্য করবে যে গল্পে আপনিও একটা চরিত্র বহন করে চলেছেন।
নটিলাস প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত “রাসোমন” বইটি অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত অনুবাদ খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। অনুবাদের প্রঞ্জলতা নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে যদি বলতে হয় তবে মনে হয় বলতে হবে কিছু কিছু সংলাপ নিয়ে। যেখানে গ্রাম্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও হয়ত বাংলার সহজতা বা ওই সময়ের হিসেবে কেমন হতে পারে সেটাকে নির্দেশ করেই হয়ত এভাবে সংলাপ গুলোকে সাজানো হয়েছে। তবে আমার কাছে কিছুটা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। তবে এর জন্য অনুবাদে কোন সমস্যা হয়নি। বরং এক ঘেয়েমি কাটিয়ে কাহিনীর মধ্যে ডুবে যেতে পারা যায় সহজেই।
বইটির প্রোডাকশন নিয়ে বলার কোন অপেক্ষা রাখে না। দারূণ একটি প্রোডাকশন নিয়ে এসেছে। বলা যায় বইটি হাতে নেবার পর মনে হবে এটাও কোন ভারতীয় দামী প্রকাশণীর বই। সেক্ষেত্রে পকেটের দিকে তাকানো যাবে না। বইটি ক্রাউন সাইজের হবার পরও দাম বেশি। এটাকে যদি ধর্তব্যের ভেতর না নিয়ে আসেন। তবে বইটি বেশ মজাদার।
আরও পড়ুনঃ অনুভূতিহীন জীবন মৃত্যুর চেয়ে ভয়ানক – জল নেই পাথর
এই বইটি চিন্তাশীল পাঠকদের জন্য বা যারা ছোট গল্প বেশি পড়েন তাদের জন্য ভাল। কারণ গল্পের ভেতর কিছুটা গাম্ভীরতা বা একটি ভারি ভাব রয়েছে। আকুতাগাওয়ার এটি একটি বৈশিষ্ট্য বলা যায়। সমাজ, প্রহসন, ঠাট্টা কে তিনি একটু ভারি ভাবে প্রদর্শিত করেছেন। যদিও বুঝতে সমস্যা হবে না। কিন্তু যদি আপনি খুব বেশি চিন্তাশীল না হন বা ভাবনার জগতকে নাড়া দিতে না চান তবে বইটি আপনার জন্য নয়।
বইঃ রাসোমন
মুল লেখকঃ রিয়ানোসুলে আকুতাগাওয়া
অনুবাদঃ খালিকুজ্জামান ইলিয়াস
রিভিউঃ আরিফ রায়হান অপু