এই পৃথিবীতে প্রানের সঞ্চার হবার আগে কেমন ছিল?
পৃথিবীতে মানুষের আসার আগে কি ছিল? ক্যামেন ই বা ছিল সেই সময়ের জীবন । মানুষ ছাড়া এই পৃথিবীর দৃশ্যপট দেখতে কেমন ছিল একবার কল্পনা করুন তো । চোখের সামনে সবুজের অভয়ারন্য এবং পৃথিবীর এক প্রকৃত রূপ । কিন্তু হঠাৎ করেই জন্ম নেয় “লুক” যার কারনে পৃথিবীতে এক ধ্বংস ।
ডাঃ ডি ক্লার্ক, সৈন্যদের চিকিৎসক । তিনি শুধু একজন ডাক্তার ই নন ইতিহাসবিদও বটে । বোয়ের যুদ্ধে গুহায় আটক অবস্থায় সৈন্যদের চিকিৎসা দেয়াই ছিল তার একমাত্র কাজ । কিন্তু এক অজানা কারনে সৈন্যদের দেহের ভেতরে পচন ধরে । ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পরে প্লাটুন জুড়ে । আস্তে আস্তে তিনি আবিস্কার করে ফেলেন পৃথিবীর এক অজানা তথ্য । যা হয়ত মানব কল্যানের উপকারে আসবে, নয়ত ধ্বংস করে দেবে পুরো পৃথিবীকে । তাহলে কে বাচাবে এই পৃথিবীকে?
টাকার ওয়েন ও কেইন দুজনেই হরিহর আত্মা । একজন আর একজন কে ছাড়া চলে না । তবে তাদের বন্ধুত্বটা হয়েছে আর্মি রেঞ্জে থাকার সময় । তবে কেইন কোন মানুষ নয় । কেইন হচ্ছে বেলজিয়ান শেফার্ড কুকুর । আর্মি রেঞ্জে থাকার সময় থেকেই টাকারের সাথে রয়েছে কেইন । যদিও এক যুদ্ধে এব্যেল কেইন কে হারাতে হয় ওদের । সেই স্মৃতি টাকারের মনে সব সময় নাড়া দেয় । তাই কেইন কে চোখের সামনেই রাখে টাকার । আর্মি রেঞ্জ ছেড়ে আসার পরও তারা একই সাথে রয়েছে ।
টাকার ও কেইন এখন কাজ করে স্বাধীন ভাবে । নিকৃষ্টকে নিকৃষ্টতমের হাত থেকে রক্ষা করাই ওদের কাজ । অনেকটা খুশি মনেই এই কাজ করে । যদিও জানে এতে বিপদ আছে । জীবনের ঝুকি আছে তবুও করে । রাশিয়ান বিলিয়োনিয়ার বোগদান ফেদোসিভকে গুপ্ত ঘাতকের কাছ থেকে বাচায় ওরা । তবে ঠিক সেই সময় সিগমা কমান্ডারের একটা ফোনে নতুন মিশনে জড়িয়ে পরে ওরা ।
রাশিয়া থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে বিলিয়োনিয়ার এবং সেই সাথে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আব্রাম বুকোলভ কে । তবে এখানে সমস্যাটা শুরু হয় । বিজ্ঞানী একা যেতে চান না । তার সহকারীদের ও নিয়ে যেতে হবে । কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ন একটা আবিস্কার করে ফেলেছেন তিনি । সেই আবিস্কারের পেছনে লেগেছে এক রাশিয়ান জেনারেল খাযরিন । যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই আবিস্কার নিজের করে নেয়া । যাতে অন্য কেউ সেটা হাতিয়ে নিতে না পারে । অন্য দিকে আব্রাম চান সেটা মানব কল্যানে কাজে লাগানো হোক ।
তার আবিস্কার হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক “লুকা” । হ্যা লুকা আবিস্কার করে ফেলেছেন আব্রাম । এখন সেই রাশিয়ান জেনারেল তার কাছ থেকে সেই তথ্য নিতে চান । দরকার হলে তাকে মেরে ফেলেও সেই তথ্য তার নিতেই হবে ।
শুরু হয় মিশন “লুকা” । তবে প্রতি পদে পদে যে বিপদের হাতছানি সেটা টাকার জানত । তবে তার বিস্ময় হচ্ছে শত্রু পক্ষ সব সময় তাদের অবস্থান জেনে যাচ্ছে । তার মানে তাদের মধ্যেই কেউ একজন বিশ্বাসঘাতক, তবে বের করার উপায় নেই । শেষ পর্যন্ত টাকার কে অপেক্ষা করতে হবে । লুকা খুজে বের করতে হবে ।
লুকার রহস্যের মাঝেই রয়েছে সব কিছুর সমাধান । লুকা খুজতে যেতে হবে অনেক দূর তাও সেটা সঠিক জায়গা কিনা সেটাও দেখার বিষয় । অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে দেয়ার মত । তবে লুকা কি সত্যি রয়েছে । নাকি মরিচীকার পেছনে দৌড়োচ্ছে ওরা । আর লুকা পেয়ে গেলেই বা কি হবে । কি ভাবে রক্ষা করবে লুকাকে ।
রাশিয়া থেকে নামিবিয়া, সেখান থেকে আমেরিকা । কার জয় হলো? কে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে? লুকার ই বা কি হয়েছে । মানুষ কি লুকার কথা জানতে পেরেছে । নাকি লুকা মানুষে মাঝে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে ।
সব রহস্য ও ধাধার উত্তর পাওয়া যাবে “দ্য কিল সুইচ” এই বইতে । জেমস রলিন্স ও গ্র্যান্ট ব্ল্যাকউড এর টাকার ওয়েইন সিরিজের প্রথম বই এটি ।
বইটি শুরু করার সময়টা আমার কাছে মনে হয় ঠেলাগাড়ি ঠেলার মত । আসলে থ্রিলারের শুরু এভাবেই হয় । তাও শুরু দিক শেষ করতে আমার একটু কষ্ট হয়েছে । তারপর তো যখন রহস্যে গভীর হওয়া শুরু করল, তখন বই ছেড়ে আর উঠতে ইচ্ছে হচ্ছিল না । রহস্যের গভীরতা শুধু টেনেছে ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি শুরুতে এক রকম ধারনা করবেন যখন পড়বেন । শেষে যেয়ে চমকে যেতে হবে । এটা হবেই । প্রতি পৃষ্ঠাতেই আপনার জন্য চমক থাকছে । তবে বইটি রহস্যের চেয়ে এডভেঞ্চার বেশি । মনে হবে চোখের সামনে হচ্ছে । একবার আমার মনে হয়েছে আমি কোন মুভি দেখছি । একশন থ্রিলার মুভি ।
আপনি একবার পড়া শুরু করে যদি বইয়ের ভেতর ঢুবে যান মনে হবে আপনিও ঠিক সেই জায়গাতে রয়েছে । এক একটা জায়গার বর্ননা অনেক নিক্ষুত ভাবে দেয়া হয়েছে । তাছাড়া বইয়ের শেষে সব কিছুর একটা ছোট বর্ননা দেয়া হয়েছে । যেখানে বইয়ের ঘটনা ক্রম গুলোর বর্ন্না উঠে এসেছে ।
পরিশেষে বলব, “দ্য কিল সুইচ” বইটি আপনাকে একটা পুরোপুরি একশন এডভেঞ্চারের স্বাদ এনে দিতে পারে । বই পড়ুন । ভাল থাকুন । ধন্যবাদ ।
বইঃ দ্য কিল সুইচ
লেখকঃ জেমস রলিন্স ও গ্রান্ট ব্ল্যাকউড
অনুবাদঃ মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ