আমার এক হিন্দু বন্ধু আছে৷ হিন্দু বললাম কারণ সে ওই ধর্মের। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ আমি আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কে কে হিন্দু কে মুসলমান এসব নিয়ে ভাবিনি৷ বন্ধু তো বন্ধু তার আবার জাত পাত ধর্ম কি। সে তার ধর্ম পালন করে তার মত, আমি আমার ধর্ম পালন করি। আজ যেই বইটির কথা বলব সেটা ঠিক এমন একটি বিষয় নিয়ে বইটি হচ্ছে, “সাম্প্রদায়িকতা – ক্ষমতা ও রাজনৈতিকতা”।
.
এখন আমি হঠাৎ করেই এই বিষয়টি নিয়ে কেন বলছি৷ আপনার মনে হতে পারে ধর্মের কথা কেন নিয়ে আসলাম। আসলে আমি যেই বইটির কথা বলতে চাচ্ছি সেই বইটি ঠিক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা যেখানে ধর্মের কথা আছে৷ আছে মানুষের চিন্তা ভাবনার কথা। বিশেষ ভাবে আমাদের দেশের মানুষের চিন্তা ভাবনার কথা৷ বইটি হচ্ছে “সাম্প্রদায়িকতা – ক্ষমতা ও রাজনৈতিকতা”। বইটি লিখেছেন সহুল আহমদ ও সারোয়ার তুষার।
.
শুরুতে যা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে আমার ভাবনা। আমি আসলে অসাম্প্রদায়িক কিনা এখনও জানি না৷ তবে মানুষ যখন একে অন্যের উপর জুলুম করে ক্ষমতা দেখায় এবং ফায়দা লোটার চেষ্টা করে আমার মনে হয় সেটাই সাম্প্রদায়িকতা। আমি এর থেকেই দূরে থাকি৷
.
আসলে সাম্প্রদায়িকতা কখনই সমাজের জন্য ভাল কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে না৷ এখন আমরা একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন যে সবাই কোন না কোন জায়গাতে সাম্প্রদায়িক। এটা আপনি মানুন বা না মানুন৷ আমরাদের ভেতর সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে৷ কখন বেশি সবাই আমরা এর মধ্য দিয়ে যাই। অথবা আমাদের যেতে হয়। যদিও সেটা ক্ষেত্রে বিশেষে আলাদা হয়ে থাকে।
.
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি ধরি, তবে সাম্প্রদায়িকতা বলতে সবাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোনকেই সামনে দেখতে পাবেন। কারণ আমরা এটাই সবচেয়ে বেশি দেখতে পাই। আমরা মুখে বললেও কাজের সময়ে সেটা দেখাতে পারি না। আমরা সবাই অসাম্প্রদায়িক এই কথাটা অনেক বলা হয় বা শোনা যায়। কিন্তু ক্ষমতা বা রাজনীতির পট অনুযায়ী এই সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতা দুটোর অবস্থা ভিন্ন হয়ে থাকে। কারণ ক্ষমতা ও রাজনীতির সাথে সাম্প্রদায়িকতার অবস্থা ও ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকে৷
.
এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আপনি দেখতে পারেন হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার কথা। যেমন ধরুন আপনি এবং আপনার বন্ধু দুই জন দুই দলের। কিন্তু যখন ধর্মীয় ভাবে আঘাত আসে তখন আপনি ও আপনার বন্ধু যেই মতাদর্শের হন, ঠিক ই এক হয়ে তার প্রতিবাদ করে থাকেন৷ তখন কিন্তু এটা এক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বলা গেলেও সেটা পুরোপুরি ভাবে ঠিক বলা যায় না। কারণ আপনি সময়ের প্রয়োজনে এক হয়েছেন। নিজেদের ফায়দা ও ক্ষমতাকে দেখানোর একটা প্রচেষ্টা ছিল আপনাদের মাঝে৷
.
বাংলাদেশের এই প্রেক্ষাপট আমরা অনেকবার ই দেখতে পেয়েছি। এটা স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় বাংলাদেশের মানুষ আসলে সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতা দুটোর মাঝে পার্থক্য করতে পারে না৷ কারণ তারা আসলে জানেই না যে কোনটি সাম্প্রদায়িকতা ও কোনটি নয়। ক্ষেত্র বিশেষে আসলে মানুষ বুঝতে পারে, তবে সেটা খুব সামান্য। আমাদের ভেতর এখনও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনা আসেনি বা বলা যায় আমরা কোন কিছুর যুক্তিতর্ক দিয়ে বুঝতে চাইনি।
.
আপনি আমি বা আমরা সব সময় হুট করেই কিছু একটা করে ফেলি বা নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করি। সেটা ক্ষমতা বা অন্য কিছু হতে পারে৷ এখানে সাম্প্রদায়িকতা নেই। সাম্প্রদায়িকতা তখনই আসে যখন সেটা নিজেদের বিরুদ্ধে চলে যায়৷ তখন আমরা এটা নিয়ে বেশ হইচই করে থাকি। “সাম্প্রদায়িকতা – ক্ষমতা ও রাজনৈতিকতা” বইটিতে সব কিছু সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা যায় আমাদের এই সময়ের রাজনীতি ক্ষমতা ও সাম্প্রদায়িকতা সব কিছুর সম্পর্কে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
.
ছোট করে বললে আমরা যতদিন নিজেদের ভেতর সাম্প্রদায়িক ভাবনা গুলোকে চেপে রাখব ততদিন আসলে আমরা নিজদের অসাম্প্রদায়িক বলতে পারব না৷
বইঃ সাম্প্রদায়িকতা – ক্ষমতা ও রাজনৈতিকতা
লেখকঃ সহুল আহমদ ও সারোয়ার তুষার
রিভিউঃ আরিফ রায়হান অপু