October 13, 2025

Bookish Life

Home of Readers

মফিজন: প্রথাভাঙা নারীর আকাঙ্ক্ষার গল্প

মফিজন - মাহবুব উল আলম - রিভিউ - আরিফ রায়হান অপু

বাংলা সাহিত্যে বড় গল্প, উপন্যাস হবার সার্থকতা কোথায় এই প্রশ্নে অনেক ভাল রচনা বা সাহিত্য বাদ পরে যায়। আবার এমন কিছু সাহিত্য আমাদের সামনে উঠে আসে যেটা আপনি আমি ভাবতেও পারিনি। অথচ আজকে থেকে বহু বছর আগে যারা সাহিত্য রচনা করেছেন তারা কতটা দূরদর্শী বা তাদের চিন্তাভাবনা কতটা বিস্তৃত ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ মফিজন উপন্যাসটি তাই প্রমাণ করে।

মফিজন - মাহবুব উল আলম - bookishlife

বাংলায় যারা সাহিত্য রচনা করেন বিশেষ ভাবে মুসলিম সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে পুরুষ বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কথা উল্লেখ করা। সেখানে তাদের জৈবিক চাহিদার কথা বার বার উঠে এসেছে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তাদেরও যে জৈবিক তাড়না রয়েছে। সেটিকে সাহিত্যের পাতায় উঠিয়ে আনার সাহস খুব কম মানুষ করেছেন। আবার বলা যায় এটাও যে সাহিত্যের উপজীব্য হতে পারে বা হবে সেটাও খুব কম সাহিত্যিক চিন্তা করে থাকেন।

এক্ষেত্রে বলা যায় যে এটা প্রথাবিরোধী বা সমাজের চোখে এটা অশ্লীলতা বলে গণ্য করা হয়েছে বা হয়। আবার অনেকেই আছেন এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না।



“জীবন যেখানে যেমন, হয়ত এটাই নিয়তি”

ছবিবর ও মফিজন দুই বোন। তাদের ডাক নাম হচ্ছে ছবি ও মফি। দুজনের মধ্যে ছবি বড় এবং মফি ছোট। যদিও শারিরীক গঠনে তা বোঝা যায় না। আবার ছবি কিছু শ্যাম বর্ণের অপর দিকে মফি ফর্সা বা উজ্জল। কিন্তু এই সৌন্দর্য মক্তবে বোঝার মত ক্ষমতা কারো ছিল না। ঠিক তখন ই আগমন ঘটে মামুদের। মফি এর সাথে মামুদের বোঝা পরার দিন শেষ হবার আগেই বিদায়ের ডাক চলে আসে।

এই দিকে তখন সমাজ ব্যবস্থা বিশেষ ভাবে মুসলিম সমাজ ব্যবস্তায় আশরাত আতরাফের ফারাক ছিল৷ এই দুজনের মধ্যে আত্মীয়তা কেউ মেন নিত না আবার কেউ করত না৷ ছবি এবং মফির বাবা হচ্ছে এই আতরাফ শ্রেনীর। যদিও পাটের ব্যবসায় টাকা পয়সা উপার্জন করেছেন। কিন্তু দালাল শব্দ তার পিছু ছাড়েনি। আশরাফ শ্রেনীর কারো সাথে আত্মীয়তা কতে জাতে ওঠার চেষ্টা করছেন। তাই তিনি মামুদের পিতা পীর তাইজুদ্দিনের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করেন। ছবির সাথে মামুদের বিয়ে হয়ে যায়, আর মফি আড়ালে কেদে ওঠে।

 

“‘মফিজন’ উপন্যাসিকা নিয়ে লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় বলেন, “লেখাটি আকারে ছোট হলেও একখানি নিপুণ রেখাচিত্রের মতো অল্পে সম্পূর্ণ। কোথাও অতি অসম্মানের চেষ্টা নেই, অপভাষণও নেই। সত্য তার অনাবৃত রূপ নিয়ে নিজের সৌন্দর্যের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে”।

অপর দিকে বকশু ছোট বেলায় পড়ার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আকিয়াবে চলে যায়। সেখানেই তার অবস্থার উন্নতি ঘটে। বেশ পয়সাওয়ালা সে। যদিও বয়স একটু বেশি কিন্তু তাতে সমস্যা নেই। মফির বাবা বকশুর সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। বিয়ের দিন ই বকশুর কাছে টেলিগ্রাম আসে তাকে চলে যেতে হবে। বাসর রাতের পর ই। বাসর এর পর দিন ই বকশু বিদায় নেয়। মফি আবার একা হয়ে যায়। ঘরে বলতে শুধু বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি।

ঠিক এমন সময় মফির জীবনের মোড় ঘুরে যায় আবার। তার জীবনে আসে খোকা। সম্পর্কে ভাগ্নে হলেও, সেই সম্পর্ক ভিন্ন পথে চলে যায়। নারীর কামনা ও খোকার কৈশোরের কৌতুহল জন্ম দেয় নতুন অভিজ্ঞতার।

 

আরও পড়ুনঃ অনুভূতিহীন জীবন মৃত্যুর চেয়ে ভয়ানক – জল নেই পাথর


মনে রাখা দরকার যে এই মফিজন উপন্যাসটি লেখা হয়েছে ১৯৪৬ সালে। তখন সমাজ ব্যবস্থা অন্য রকম ছিল। অনেকেই একে অশ্লীল বলে উপেক্ষা করেছেন অথচ ছোট কথায় এত সুন্দর করে বর্ণনা করা যায় তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। কাহিনী অনেক বড় নয় আবার একে উপন্যাসের অওতায় ফেলাও যায় না। বড় গল্প বলা যায়। কিন্তু কোথাও একটু বাড়িয়ে বা বাড়তি কথা নেই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন শব্দ বা বাক্য নেই৷ ছোট ছোট বাক্য আর শব্দে লেখক কাহিনী কে বর্ণনা করেছেন।

এখন এই যে অশ্লীল বলা হয়েছে তা আসলেই কতটুকু বা কতখানি অশ্লীল তা আলোচনা করা যেতেই পারে। কারণ এটা লেখকের উপর বর্তায় যে তিনি জৈবিক চাহিদা, যৌনতা আর কামনাকে কিভাবে উপস্থাপন করেছেন। যদি তিনি নিজের বা সাহিত্যের গন্ডির মধ্যে থেকেই সেটাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে থাকেন।তবে অব্যশই সেটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আমার মনে হয়। বাকিটা পাঠকদের হাতে।

বই: মফিজন
লেখক: মাহবুব উল আলম

 

রিভিউ – আরিফ রায়হান অপু